মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন

ইবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ: ছাত্রী মোটা না চিকন দেখতে ভিডিও কল

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেটের সময়: বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অন্তত এক ডজন ছাত্রী লিখিতভাবে অভিযোগ করে জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ওই শিক্ষক ছাত্রীদের প্রতি অশালীন আচরণ, কুরুচিপূর্ণ বার্তা এবং মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে মঙ্গলবার, ১ জুলাই।

‎২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী তার লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘‘স্যার আমাকে ইমোতে ভিডিও কল দেন। আমি না ধরলে পরে অডিও কলে বলেন—‘অনেকদিন দেখি না, মোটা হয়েছো না চিকন হয়েছো তা দেখার জন্য ভিডিও কল দিচ্ছি।’ এরপর বলেন, ‘তোমার কি কথা বলার মানুষ আছে? এখন বলছো কেউ নেই, পরে যদি দেখি ক্যাম্পাসে কারও হাত ধরে ঘুরছো, তখন বুঝো।’”

‎ছাত্রীটি জানান, শ্রেণিকক্ষে এমনকি অন্যান্য সহপাঠীদের সামনেও ওই শিক্ষক তার উচ্চতা ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুরুচিপূর্ণ রসিকতা করতেন। মাসিক চক্র নিয়েও আপত্তিকর মন্তব্য করতেন, যা একজন শিক্ষক হিসেবে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য ও অপমানজনক।

‎অভিযোগে বলা হয়, ড. আজিজুল ইসলাম প্রায়শই হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোতে ছাত্রীদেরকে অশালীন বার্তা পাঠাতেন। কোনো বার্তার উত্তর না দিলে পরীক্ষার রেজাল্টে প্রভাব ফেলবেন বলে ভয় দেখাতেন। তিনি প্রজেক্টের কাজের নামে ছাত্রীদের একান্তে ডাকতেন এবং অনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ হতে চাপ দিতেন।

‎আরও কয়েকজন ছাত্রী জানান, শিক্ষক আজিজুল ইসলাম ‘পছন্দের ছাত্রীদের’ প্রতি পক্ষপাত দেখাতেন এবং তাদের কাছ থেকে ‘বিশেষ সুবিধা’ আদায়ের চেষ্টা করতেন। অনেক সময় ‘ভালো রেজাল্ট’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নানাভাবে তাদের চাপ সৃষ্টি করতেন।

‎গত ২২ জুন বিভাগীয় সভাপতির কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয় একাধিক শিক্ষার্থী। এরপর বিষয়টি একাডেমিক কমিটিতে উত্থাপন করা হয় এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ মেলায় ড. আজিজুল ইসলামকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ধরনের বিভাগীয় কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

‎বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম নাজমুল হুদা বলেন, “আমরা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একাডেমিক কমিটির সভা করে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। অভিযোগগুলো যথেষ্ট গুরুতর ও প্রমাণসহ উপস্থাপিত হয়েছে। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি আর কোনো শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।

‎অভিযোগ অস্বীকার করে ড. আজিজুল ইসলাম বলেন, “আমি কাউকে হেনস্তা করিনি। শিক্ষার্থীরা আমার কথার ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছে। এটি একটি ষড়যন্ত্র। আমি হয়তো বলেছি ভালো পোশাক পরে আসতে, কিন্তু সেটি আন্তরিকতার জায়গা থেকে বলেছি। তবে সবাই তো একইভাবে নেবে না।

‎ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর পুরো ক্যাম্পাসে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে ব্যাপক আলোচনা ও ক্ষোভের ঝড়।

‎ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে। অনেকেই বলছেন, কেবল বরখাস্ত করলেই চলবে না, এমন শিক্ষকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে কেউ আর এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার সাহস না পায়।

অনুগ্রহ করে এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2025 thecrimesearch.com