মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন

উজিলাবে মাদকের সম্রাজ্য: নাঈম উদ্দিন ফকির ও তার চক্রের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

স্টাফ রিপোর্টার
  • আপডেটের সময়: শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫


রাজধানীসহ সারাদেশে মাদক ব্যবসার জালে জড়িয়ে পড়ছে সমাজের তরুণ প্রজন্ম। পর্দার আড়ালে থাকা গডফাদাররাই সহযোগীদের মাধ্যমে এই ভয়াবহ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে দিন দিন ধ্বংসের পথে যাচ্ছে তরুণ সমাজ। মাদকের টাকার জোগাড়ে এখন ধনীর দুলালরাও জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই ও বিভিন্ন অপরাধে।

‎এ চিত্রের ব্যতিক্রম নয় গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানার ৬নং ওয়ার্ডের উজিলাব গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা এই গ্রামের তরুণ, কিশোর ও মধ্যবয়সীদের মাঝে নেশার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে এক সংঘবদ্ধ মাদক চক্র। স্থানীয়দের ভাষায়, এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে এলাকার নামধারী ‘মাদকের কিং মাস্টার’ নাঈম উদ্দিন ফকির ও তার ছেলে মনির ফকির।

‎তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে শফিকুল ইসলাম, ইসমাইল হোসেন ও মোঃ হাবিবুল্লাহসহ আরও কয়েকজন। এলাকাবাসীর অভিযোগ এদের দৌরাত্ম এখন লাগামহীন ঘোড়ার মতো। কোমলমতি শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী কাউকেই তারা ছাড়ছে না। নানা কৌশলে তরুণদের নেশার জগতে টেনে নিচ্ছে এই চক্র।

‎বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনের দেশ না হলেও ভৌগলিক অবস্থানের কারণে প্রতিনিয়ত এদেশে প্রবেশ করছে নানা প্রকার মাদকদ্রব্য। ফলে নতুন প্রজন্ম এই ভয়ংকর আগ্রাসনের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না।

‎রাজনীতির আড়ালে মাদকের সাম্রাজ্য
‎অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাঈম উদ্দিন ফকির বর্তমানে বিএনপির সভাপতি পদপ্রত্যাশী। তার ছত্রছায়ায় উজিলাব গ্রামে গড়ে উঠেছে এক মাদক সাম্রাজ্য। তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন হুমায়ুন কবির (পিতা মৃত আলিমুদ্দিন মুক্তার), নুরুল আমিন (পিতা মৃত আবুল হোসেন) ও ফখরুল ইসলাম (পিতা মৃত খুরশেদ আলম)।

‎নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, হুমায়ুন কবির স্বৈরাচার সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের পদধারী ছিলেন। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তিনি খোলস পাল্টে বিএনপির নাম ব্যবহার করে এখন আবার নতুন পরিচয়ে সক্রিয়।

‎প্রভাবশালী গডফাদারদের ভয়ে নির্বাক জনগণ
‎সূত্রমতে, নাঈম উদ্দিন ফকির ও তার ছেলের অস্ত্র ও সন্ত্রাসী প্রভাবের কারণে সাধারণ মানুষ নীরব দর্শকে পরিণত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কেউ দেখায় না। স্থানীয়দের মতে, উজিলাবে এখন যেন বাপ-ছেলের “রামরাজত্ব” চলছে।

‎এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আছি। মাদকের সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালীরাও ছাড় পাবে না।

‎জানা গেছে, নাঈম উদ্দিন ফকির ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‎তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, গডফাদাররা নাকি নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এই ভয়ংকর ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে। মনির ফকির তৎকালীন এসপি হারুনুর রশিদের বিভিন্ন অপরাধের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

‎এলাকাবাসীর দাবি উজিলাবের সাধারণ মানুষ প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ কামনা করছে। তারা বলছেন, আমরা চাই, পুলিশ ও প্রশাসন পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে এই অস্ত্রবাজ ও মাদক কারবারিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক।

‎স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, খুব শিগগিরই মাদক বিক্রেতাদের ডিলার, এজেন্ট ও তাদের কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

অনুগ্রহ করে এই পোস্টটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2025 thecrimesearch.com